ক্যাম্পাস লাইফ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা মানুষের কাছ থেকে হাজারো উপদেশ শুনবে। এটা করো, সেটা করো না ইত্যাদি শুনতে শুনতে তুমি হয়তো কনফিউজড হয়ে যাও। এখানে তাই ১৫টি উপদেশ দেয়া হলো যা সবার জীবনেই বাস্তবায়ন করা উচিত:
১। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ক্যারিয়ার গড়ার জায়গা না; জীবনকে উপভোগ করতে শেখার সেরা স্থান। তাই, লক্ষ্য রেখ যেন চার বছর পর একটা সার্টিফিকেটই তোমার একমাত্র অর্জন না হয়।
২। ক্লাস ছুটির পর বাসায় গিয়ে পড়তে বসা/ টিউশনিতে না গিয়ে কিছুটা সময় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিবে। তাস খেলা শিখবে। বুড়ো বয়সে গিয়ে এটাই সবচেয়ে মিস করবে!
৩। নিজ বিভাগের শিক্ষার মান, ল্যাবের সুবিধা নিয়ে কমেন্ট করার আগে চিন্তা করবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ গুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান কতটুকু ভালো! বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্টরা সার্কিট, পেট্রি ডিসও ধরার সুযোগ পায় না। MIT/ Harvard-এর আশা এখান থেকে না করাটাই ভালো। এই সত্য যত তাড়াতাড়ি বুঝবে তত ভালো। প্রথম বর্ষে সবাই অনেক আশা নিয়ে আসে। সত্য এবং আকাঙ্ক্ষার মাঝের ব্যবধান নিজেকেই ঘুচিয়ে আনতে হবে।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্দেশক। তাদের কাছ থেকে নোট/ স্লাইড পাওয়ার আশা করে বসে থাকা উচিত না। এটা কোচিং সেন্টার না। এখানে তুমি কতটুকু পড়বে সেটা সিলেবাসে থাকে না। তুমি চাইলে নিজে নিজে পড়ে তোমার শিক্ষকের থেকেও ডিপ নলেজ পেতে পারো। তাই, নিজের জানার পরিধি কেবল ক্লাসের লেকচারে বেঁধে রেখো না। এমনকি কেবল নিজের সাবজেক্টে আটকে রেখো না। সব সায়েন্সের ব্রেক থ্রোর কথাই পড়বে। দিন শেষে যাতে একজন জ্ঞানী মানুষ হতে পারো।
৫। বিভাগের প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই আয়োজক/ পারফরমারের ভূমিকা পালন করবে। লক্ষ করলেই দেখবে, কেউই আহামরি নাচ-গান-অভিনয় পারে না। সবাই তোমার মত! তাই, লজ্জা না পেয়ে সবাই যা করছে তাতে অংশগ্রহণ করো। বিভাগের প্রতি তাহলে একটা ভালোবাসা তৈরি হবে।
৬। মানুষ দুই রকমের– কেউ গ্লাসের অর্ধেক ভর্তি দেখে (optimistic), আর কেউ দেখে একটা গ্লাসের অর্ধেক খালি(Pessimistic)। বড় ভাইদের কাছে উপদেশ নেয়ার সময় দ্বিতীয় গোত্রের কাছ থেকে দূরে থাকবে। এখন কথা হলো, কীভাবে বুঝবে কে কোন গোত্রের? লক্ষ্য করে দেখ, কোন সিনিয়ররা বিভাগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করে। এরাই দ্বিতীয় গোত্রের। প্রথম গোত্রের ছাত্ররা কিছু না থাকলেও সেখানে কিছু আছে তা দেখানোর চেষ্টা করবে।
নিজের জানার পরিধি কেবল ক্লাসের লেকচারে বেঁধে রেখো না
৭। বিভাগে পড়ে ভবিষ্যতে কি চাকরী করবে তা নিয়ে প্রথম বর্ষে চিন্তা করে আনন্দ মাটি করবে না। চাকরী নিয়ে মাথা ব্যথা চতুর্থ বর্ষে যেয়ে কইরো। এর আগে সবকিছু বোঝার ক্ষমতা সবার হয় না। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম তিন বছর নিজ সেক্টরের জ্ঞান অর্জন ও বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায় ব্যয় করাটাই শ্রেয়। চাকরির দুশ্চিন্তাটা চতুর্থ বর্ষের জন্যই তোলা থাক।
৮। ক্লাসের একদল সহপাঠী থাকবে যারা সব অজুহাতে পরীক্ষা পেছানোর ধান্দায় থাকবে। নিজে সেই দলের অংশ হয়ে যেয়ো না। পরীক্ষা কালকে সকালে হোক আর অগাস্ট মাসে হোক, তুমি পড়বে সেই আগের রাতেই। তাই, সময়ে সময়ে সব মিডটার্ম দিয়ে দাও।
৯। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্যতম আনন্দের মুহূর্তগুলো হচ্ছে ফাল্গুন, বৈশাখ, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানগুলো। তাই, বাসায় বসে পহেলা বৈশাখের ছুটিতে সারাদিন না ঘুমিয়ে থেকে বরং বন্ধুদের সাথে নিজের ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ খোশ-গল্প করতে পারলে মন্দ হবে না।
১০। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কিছু কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে শিখবে। সেটা যত ছোট ইনকামই হোক না কেন। বাবা-মার কাছ থেকে আর কতদিন হাত খরচ নিবে?
১১। CGPA এর পেছনে দৌড়ালে জীবনে Excellency আসবে না। তাই, Excellency অর্জনের জন্য দৌড়াও। CGPA দেখবে ফ্রিতে চলে আসবে।
১২। যত বেশি মানুষের সাথে পারো নিজের ব্যক্তিগত যোগাযোগ সৃষ্টি করো। চাকরির বাজারে তোমার CGPA দিয়ে কাজ হবে না। সবাই চায় পরিচিত যোগ্য মানুষকে নিতে। তাই, শুধু যোগ্য হয়ে লাভ নেই।
১৩। জীবনের সুখ নামক ব্যাপারটাকে সফলতা/ CGPA দিয়ে সংজ্ঞায়িত করো না। সুখ পরিমাপ করবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতগুলো স্মৃতি তৈরি করেছো তা দিয়ে।
১৪। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে জীবনের কাছে যখন হেরে যাবা তখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে সেটা শেখা। ব্যর্থতা অবশ্যই থাকবে। ফেল পরীক্ষায় না করলেও ব্যক্তিগত জীবনে তুমি অবশ্যই করবে। সেটা থেকে বের হয়ে আসার শিক্ষা অর্জন করতে পারলেই গর্ব করে নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করো।
১৫। সিনিয়রদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে অনেক সুবিধা (এমনি চাকরি-বাকরি) পাওয়া যায়। টিপস হলো, কোন সিনিয়রকে রাস্তায় একা পেলে ট্রিট চেয়ে বসবা। তবে, তোমার সাথে যদি আরো 10-12 জন থাকে তাইলে কোন লাভ নেই। সর্বোচ্চ 4-5 জন খাওয়ানো যায়।
2011 সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হই। এই বছর (২০১৭) বিশ্ববিদ্যালয় আমার শেষ বছর। এই কয়েক বছরে আমি যে পরিমাণ স্মৃতি তৈরি করেছি সেটা রোমন্থন করেই বাকি জীবন পার করে দেয়া যাবে। তোমাদের সবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সুন্দর হোক!
লেখকঃ সামির মোনতাজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
Thanks | ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment